মরিশাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের একটি ছোট্ট দ্বীপ। কিন্তু মনোরম প্রকৃতি, সমুদ্রের নীল জলের আকর্ষণে প্রতি বছর এ দ্বীপের ছুটে আসে লাখো পর্যটক। তাই পর্যটকদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। দ্বীপটির আয়ের অন্যতম উৎসও পর্যটন খাত। এখানে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বেশ কিছু বাংলাদেশিও কাজ করছে।
১৫০৭ সালে বিখ্যাত আরব নাবিক দিনা আরাবি ভারত মহাসাগর দিয়ে জাহাজ নিয়ে পর্তুগাল যাচ্ছিলেন। হঠাৎ সাগরের বুকে তার নজরে পড়ে ছোট্ট একটি দ্বীপ। কৌতুহল মেটাতে তিনি জাহাজটি ভেড়ান ওই দ্বীপে। দিনা আরাবি দ্বীপটির চারপাশ ঘুরে মনোরম পরিবেশ আর সারি সারি নারিকেল গাছ দেখে বেশ মুগ্ধ হন। এই নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখে তিনি দ্বীপটির নাম দেন মরিশাস। সেই থেকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে মর্যাদা পায় দ্বীপটি ।
তবে মরিশাসে লোকবসতি শুরু হয় ১৫৫০ সালের পর। এটি পূর্ব আফ্রিকার একটি দ্বীপরাষ্ট্র। আয়তন মাত্র ২ হাজার ৪০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানীর নাম পোর্ট লুইস। ১৮১০ সালে ব্রিটিশরা দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবশেষে ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা লাভ করে মরিশাস।
মরিশাসের অধিকাংশ মানুষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাই এখানকার অন্যতম ভাষাও হিন্দি। তবে অল্পকিছু সংখ্যক মানুষ ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজিতে কথা বলে। পাহাড়-সমুদ্র-গাছ মিলে মোহনীয় সুন্দর দেশ মরিশাস। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক ছুটে আসে দেশটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই পর্যটনই দেশটির অর্থনীতির প্রধান শক্তি।
দেশটির পুরো নাম ‘রিপাবলিক অব মরিশাস’। পর্যটন ছাড়াও টেক্সটাইল, চিনি, সামুদ্রিক মাছ তাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। দেশটি বর্তমানে জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংঘের সদস্য। মরিশাসে ৯টি জেলা রয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থাও খুব উন্নত। সরকারি পর্যায় থেকে জনগণকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়।
মরিশাসে ঋতু আছে মাত্র দুটি। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল। আর সারাবছরের গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যটকদের কাছে নর্থ ও সাউথ জোন বেশি জনপ্রিয়। যারা পাহাড় আর অরন্য বেশি পছন্দ করেন তাদের যেতে হবে নর্থজোনে। এখানে রয়েছে বেশকিছু ছোট ছোট পাহাড়, ঝর্ণা আর বন। আর যাদের পছন্দ সমুদ্র, তাদের প্রিয় স্থান সাউথ জোন। মরিশাসই হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দ্বীপ যেখানে সমুদ্রের ঘন নীল পানি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কোনো পর্যটক।
পর্যটকদের সুবিধায় এখানে রয়েছে নানা ধরনের হোটেল মোটেল। মরিশাসে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট দ্বীপও। আর পর্যটকদের বিনোদনের জন্য আছে সাবমেরিন রাইড, ডিপ সী ওয়াকিং, স্কুবা ডাইভিং, ইয়টিং, সার্ফিং, প্যারা সেইলিংসহ বিভিন্ন আয়োজন। ইচ্ছে হলে দিনভর স্পিডবোট নিয়ে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো যায় সমুদ্রে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো মরিশাসেও দেখা মিলবে বাংলাদেশিদের। এখানে বিভিন্ন পেশায় ৫০ হাজারেও বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। এদের অধিকাংশই কাজ করছে হোটেল মোটেলে। পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসাও করেন অনেকে।
লেখক : ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক