Home বিশ্ব লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারতের উত্তেজনা

লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারতের উত্তেজনা

by Amir Shohel

আবারো উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চীন-ভারতের লাদাখ সীমান্তে। ভারতের দাবি, ২৯ আগস্ট গভীর রাতে লাদাখের প্যাংগং লেকে নতুন এলাকা দখলের চেষ্টা করেছিলো চীনা সেনারা। জবাবে চীনা বলছে, তারা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রমই করেনি। দু’দেশের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন। এই মুহূর্তে চীন-ভারত সীমান্ত যুদ্ধের সাজ সাজ রব।

লাদাখে ভারত-চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয় এ বছরের মে মাসে। সেই উত্তেজনা চরমে ওঠে ১৫ জুন। সে রাতে পেট্রোলিং পয়েন্ট-১৪-এর কাছে দু’দেশের সংঘর্ষে প্রাণ হারায় ভারতের ২০ সেনা। তারপর থেকে সীমান্তে শান্তি ফেরাতে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে হয়েছে কয়েকদফা বৈঠক। কিন্তু সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি কোনো দেশই। তাই গেল দেড় মাসে দু’দেশই সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন ছাড়াও মিসাইলসহ বিভিন্ন ভারি অস্ত্র মোতায়েন করেছে যুদ্ধ বিমান।

শুধু তাই নয়, এই সীমান্ত নিয়ে চলছে চীন-ভারতের বাগযুদ্ধও। এই বাগযুদ্ধের মধ্যেই ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হঠাৎ দাবি করলো, সীমান্তে চীনা সেনাদের কয়েকটি আগ্রাসন প্রচেষ্টা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। জবাবে বেইজিং বলেছে, সীমান্তে কোনো আগ্রাসনই চালায়নি তারা। উল্টো ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগ তুলেছে চীন।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এমন উত্তেজনার মধ্যেই সোমবার উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠকে লাদাখ সীমান্তে আরো ভারতীয় সেনা সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমনকি চীনা সেনাদের ঠেকাতে সবধরণের পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষমতাও দেয়া হচ্ছে সেনা কর্মকর্তাদের।

ওই বৈঠকে অংশ নেয়া এক সিনিয়র কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সীমান্ত উত্তেজনা আরো বাড়লে ভারত কি কৌশল নেবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। সেইসাথে লাদাখে আরো সেনা মোতায়েন করা হবে। অপর এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে। আর চীনা সেনাদের আগ্রাসন ঠেকাতে ভারতীয় সেনাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এদিকে বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত কিসের ভিত্তিতে চীনের নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রমের খবর প্রকাশ করেছে, তা তাদের জানা নেই। তবে প্যাংগং লেক এলাকায় চীনা সেনারা আগের অবস্থানেই আছে। এমনকি প্যাংগং লেকের দক্ষিণে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, দুই দেশের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। চীন সবসময় সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে চায়।

জানা যায়, লাদাখের প্যাংগংয়ে আটটি ফিঙ্গার পয়েন্ট আছে। ভারতের দাবি, সবগুলো ফিঙ্গার পয়েন্টই ভারতীয় ভূখণ্ডের। কিন্তু চীন বলছে, ফিঙ্গার পয়েন্ট পাঁচ পর্যন্ত চীনের অংশ। সেই বিতর্কের সমাধান এখনো হয়নি। তাই দুই পক্ষই ওই অঞ্চলে নজরদারির চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে ভারত নতুন যুদ্ধ বিমান রাফাল ও মিসাইলসহ সীমান্তে প্রস্তুত রেখেছে বিপুল পরিমাণ সৈন্য। আর ভারতকে মোকাবেলায় চীনও ব্যাপক সৈন্যসহ সীমান্তের বিভিন্ন ঘাটিতে মোতায়েন করেছে ফিফথ জেনারেশনের যুদ্ধ বিমান জে-টোয়েন্টি ও আধুনিক সব মিসাইল।

চীন-ভারতের নতুন উত্তেজনা দেখে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দু’দেশের অনঢ় অবস্থানের কারণে সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হলেও অবাক হবার কিছু নেই। কিন্তু এই যুদ্ধের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই নয়, মাশুল গুণতে হবে গোটা বিশ্বকে। তাই আর কোনো যুদ্ধ নয়, দু দেশকেই শান্তির পথে হাঁটার আহ্বান বিশ্ববাসীর।

লেখক : ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক

You may also like