Home জাতীয় দেশে এইডস আক্রান্তদের মধ্যে এগিয়ে শিরায় মাদক গ্রহণকারীরা

দেশে এইডস আক্রান্তদের মধ্যে এগিয়ে শিরায় মাদক গ্রহণকারীরা

by Newsroom
শিরায় মাদক

দেশে এইচআইভি এইডসে আক্রান্তদের মধ্যে শিরায় মাদকগ্রহণকারীর সংখ্যাই বেশি।  স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার শূন্য দশমিক শূন্য একেরও নিচে। অপরদিকে, শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, শতকরা ২৪ শতাংশ। আর প্রবাসী ও অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছেন ২০ শতাংশ।

দেশে প্রথম ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়। ২০১৯ সালে এই রোগে শনাক্ত হন ৯১৯ জন, আর মারা যান ১৭০ জন। অপরদিকে, ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশে এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত সাত হাজার ৩৭৪ জন শনাক্ত হন, যার মধ্যে এক হাজার ২৪২ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মোট শনাক্ত হওয়া সাত হাজার ৩৭৪ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী আছেন ঢাকা বিভাগে দুই হাজার ৫৭২ জন, রংপুর বিভাগে ৬৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৬ জন, সিলেট বিভাগে এক হাজার ২১৯ জন, খুলনা বিভাগে ৬৬০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৭৯ জন আর চট্টগ্রাম বিভাগে দুই হাজার আট জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইডস/এসটিডি কর্মসূচির সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানান , ‘শিরায় মাদকগ্রহণকারীদের মধ্যে আবার অন্যান্য রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় হেপাটাইটিস-সি রোগে। এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস-সি দুটোর ওই মোড অব ট্রান্সমিশন একই, সুঁই-সিরিঞ্জ। যারা শিরায় মাদক নেন তারা সুঁই-সিরিঞ্জ ভাগাভাগি করে নেন। আর এর মাধ্যমেই রোগ ছড়ায়।’

তিনি জানান, ২০১১-১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর হেপাটাইটিস-সি নিয়ে সর্বশেষ এক জরিপ করে। সেখানে রাজশাহী বিভাগে শতকরা ৯০ শতাংশ শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে হেপাটাইটিস-সি পাওয়া যায়।

এদিকে  শিরায় মাদকগ্রহণকারীরা পুরো ঢাকা শহরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। এরমধ্যে বিশেষ করে পুরান ঢাকা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকাতে তাদেরকে বেশি দেখা যায়। এই আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবার অনেকেই হেপাটাইটিস-সি রোগে আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিরায় মাদকগ্রহণকারীরা এমনিতেই এইডসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে হেপাটাইটিস-সি এর মতো রোগ। তাই তাদেরকে খুঁজে বের করে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় আনছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সম্প্রতি অধিদফতর থেকে আরেকটি সার্ভিলেন্স পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানেও শতকরা ৪০ শতাংশের কম হবে না শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে হেপাটাইটিস-সি তে আক্রান্ত। যদিও এটা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হবে পুরো কার্যক্রম সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, ‘এইচআইভি-এইডসের রোগী আমরা পাই না, কারণ এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা রেসট্রিকটেড। চাইলেই তাদের ট্রিটমেন্ট করতে পারি না। যারা ডায়াগনোসড হন তাদেরকে সরকারি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘যারা সুঁই সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নেন তাদের মধ্যে হেপাটাইটিস-সি ও বি তে আক্রান্ত রোগী প্রচুর পাই। তাদের মধ্যে এইচআইভি এইডসের প্রাদুর্ভাব বেশি। আর এই দুই রোগে একইসঙ্গে আক্রান্ত হলে খারাপ পরিণতির আশঙ্কাটা বেড়ে যায়। এটা শুধু রোগীর জন্য নয়, পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ, এতে চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়। আমাদের এইচআইভ নিয়ে ট্যাবু রয়েছে। আক্রান্তদের দিকে খারাপ আঙুল তোলে সমাজ। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কারণ, এই ট্যাবুর কারণে রোগীরা সেটা প্রকাশ করে না, তাই চিকিৎসার আওতায় আসে না।’

তিনি জানান, সরকারের এইচআইভি এইডস প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য ভাইরাসবাহীত রোগের প্রোগ্রাম আলাদা। কিন্তু প্রচার-প্রচারণা, ম্যানেজমেন্টের সব ক্ষেত্রে যদি চিকিৎসকদের নিয়ে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম নেওয়া হয় , তাহলে রোগী শনাক্ত হবে এবং চিকিৎসার আওতায় আসবে তারা।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like