Home ভিডিও সংবাদ সত্যিই কি মৎস্যকন্যার অস্তিত্ব আছে?

সত্যিই কি মৎস্যকন্যার অস্তিত্ব আছে?

by Amir Shohel

‘মৎস্যকন্যা’ সর্ম্পকে কম বেশি আমাদের সবারই আগ্রহ। এ পর্যন্ত সাহিত্য-সিনেমা থেকে শুরু করে লোকজ সংস্কৃতিতে দেখা গেছে মৎস্যকন্যা। কিন্তু বাস্তবে মৎস্যকন্যা কতটুকু সত্য? তাদের উপস্থিত আদৌ আছে কি-না? তা কখনো ভেবেছেন?

শরীরের উপরিভাগ নারীর অবয়ব এবং নিচের অংশ মাছের লেজের মতো দেখতে জলরাজ্যের অসম্ভব সুন্দর এই জলপরীদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে কতটুকু? সত্যিই কি এদের কোনো জীবন আছে?

মৎস্যকন্যা’ নামক প্রাণীটি প্রথম আলোচনায় এসেছে মেরফোক বা মের্পিপলের গল্প থেকে। এই গল্পে জলজপ্রাণীদের পুরুষ অবয়বকে বল হয়েছে মেরম্যান এবং নারী অবয়বকে বলা হয়েছে মারমেইড। সমগ্র বিশ্বের সব লোককাহিনী ও পৌরাণিক কাহিনিতে কমবেশি এই রহস্যময় প্রাণীটি আলোচনায় এসেছে।

প্রাণীটির কোমর অব্দি সোনালী চুল। উপরিভাগ নারীর মতো এবং নিচের দিক মাছের লেজের মতো। সমুদ্রের উপরিভাগে ভেসে বেড়ানো এবং বসবাসরত এই জলপরীরা মাছের মতোই দীর্ঘসময় পানি ছাড়া থাকলে নিস্তেজ হয়ে যায়।

মৎস্যকন্যা নিয়ে সর্বপ্রথম বর্ণনা পাওয়া যায় সম্ভবত অ্যাসিরিও সভ্যতায়। দেবী অ্যাটারগেটিস ভুলক্রমে তার প্রেমিককে হত্যা করেন। নিজের ভুল বুঝতে পেরে অভিশপ্ত হয়ে, তিনি সমুদ্রে আত্মহত্যা করতে গেলে সমুদ্রদেবতা পসাইডন রূপসী এই দেবীকে মৃত্যু না দিয়ে বরং অর্ধমানবী ও অর্ধমাছের শরীরের মৎস্যকন্যার জীবন দেন।

ব্যাবিলনীয় উপকথায় এই কাহিনিটিই আছে দেবী ‘ইয়া’কে নিয়ে। গ্রিক সাহিত্যে অ্যাটারগেটিসের বর্ণনা আছে ‘আফ্রোদিতি’ নামে। এ ছাড়াও গ্রীক সাহিত্যে অ্যাটারগেটিস ‘দেবী ডার্কেটো’ নামে পরিচিত।

কেউ কেউ মনে করেন মৎস্যকন্যা ছিল প্রাচীন পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের ভয়ানক ড্রাগনের স্ত্রী। যারা স্থলভাগের রাজা ও সমুদ্রপৃষ্ঠে রাজত্ব করা ড্রাগনদের মধ্যে গোপন তথ্য আদানপ্রদানের বিশ্বস্তরূপে কাজ করতো। মৎস্যকন্যাদের নিয়ে আলোচনার দিক দিয়ে প্রথম সারিতে রয়েছে, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে মেরফোকের প্রথম সারির লেখা একটি নথি যা ‘শানহাইজিং’ নামের চীনা শাস্ত্রীয় পাঠ।

আমেরিকা আবিষ্কারের সময়কালীন ক্রিস্টোফার কলম্বাসের লগবুকে ১৪৯৩ সালের ৯ই জানুয়ারি লেখা ঘটনায় মৎস্যকন্যার উল্লেখ পাওয়া যায়। কলম্বাস যখন ক্যারিবিয়ান দ্বীপ অতিক্রম করছেন; তখন না-কি তিনি নারী অবয়বের একটি মৎস্যকন্যাকে সমুদ্রের পারে বসে থাকতে দেখেন।

তিনি সেটি লোককাহিনির মতো জাদুকর বিষয় হিসেবে বর্ণনা না করে, সাধারণ মানুষের মুখাবয়ব বিশিষ্ট একেকরকম মাছের উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বিশ্লেষকরা মনে করেন কলম্বাস ম্যানাটিস বা এ জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী দেখেছিলেন যাদের দূর থেকে দেখলে মানুষ বলে বিভ্রান্তি হয়।

১৯৮৯ সালে ডিজনি প্রযোজিত প্রথম মৎস্যকন্যাদের নিয়ে নির্মিত হয় বিখ্যাত একটি ছবি ‘দ্য লিটল মারমেইড’ নামে । তা ছাড়াও ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে এই গল্পের মতোই একটি মৎস্যকন্যার জনপ্রিয় স্মৃতিস্তম্ভ আছে।

এতসব ঘটনার পরিক্রম থেকে এটি স্পষ্ট যে, মৎস্যকন্যাদের উপস্থিতি নিয়ে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের যুক্তিতর্ক সেই প্রাচীন যুগ থেকেই চলমান এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেটি চলতে থাকবে। মৎস্যকন্যা আসলেই আছে কি-না? এই প্রশ্নের উত্তর বাস্তবিক অর্থে অজানা। কেননা, দর্শন বা পাঠ্যশাস্ত্রে বর্ণিত ঘটনাগুলো তাদের উপস্থিতির পক্ষে কোন অকাট্য দলিল বা প্রমাণ বহন করে না।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like