Home জাতীয় হাসপাতালে ‘৭ কর্মচারীর মারধরে’ সহকারী পুলিশ সুপারের মৃত্যু

হাসপাতালে ‘৭ কর্মচারীর মারধরে’ সহকারী পুলিশ সুপারের মৃত্যু

by Newsroom

রাজধানীতে মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে কর্মচারীদের মারধরে চিকিৎসা নিতে আসা আনিসুল করিম নামে এক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম মারা গেছেন।

৯ নভেম্বর সোমবার  সকালে সাড়ে ১১টার দিকে আদাবরের মাইন্ড এইড নামে একটি মানসিক হাসপাতালে   ভর্তি হওয়ার কয়েক মিনিট পরেই তিনি এ হামলার শিকার হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই ঘটনায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার একটি ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যেখানে দেখা গেছে সাত জন মিলে এএসপি আনিসুল করিমকে মারধর করছে।

পুলিশ জানায়, ‘ভর্তি করানোর কয়েক মিনিট পরই তাকে অচেতন অবস্থায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।’

আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মৃত আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। তিনি এক সন্তানের জনক।

হাসপাতাল থেকে পুলিশ যে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে উদ্ধার করেছে, সেটিতে দেখাগেছে, আনিসুল করিমকে সাত জন ব্যক্তি ধরে টেনে হেচড়ে একটি কক্ষে ঢুকাচ্ছে। এরপর তাকে ফেলে তিন জন তার পিঠের উপরে, দুজন পায়ের ওপরে এবং দুই জন হাত ধরে বেঁধে ফেলে। দুই জন কুনুই দিয়ে তার পিঠ ও ঘাড়ে আঘাত করছে। মারধরের কয়েক সেকেন্ড পর অচেতন হয়ে পরে আনিসুল। তারপর তার মুখে পানি ছেটানো হয়, এই সময় মেঝেতে পানি দিয়ে কিছু একটা মুছতেও দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর অ্যাপ্রন পরা দুই জন নারীকেতার বুকে পাঞ্চ করতে দেখা যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে জানান, এই ঘটনায় এরইমধ্যে হাসপাতালের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ৩১তম বিসিএসে পুলিশের মধ্যে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় ছিলেন এএসপি আনিসুল করিম। প্রথম জন ফাউন্ডেশন কোর্স না করায় তাকেই ব্যাচের প্রথম হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু তার ব্যাচসহ ৩৩তম ব্যাচের অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হলেও অজানা কারণে মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। এসব কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। এই জন্য তাকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

পরিবারের সঙ্গে আনিসুল করিমওই কর্মকর্তা আরও জানান, নিহত আনিসুল করিম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতোকত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের আগে তিনি নেত্রকোনা জেলা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুন- ভোলায় পুলিশ সুপার হলেন স্কুলছাত্রী

এদিকে এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন শোক প্রকাশ করে বলেছে, আনিসুল করিমের মতো একজন মেধাবী কর্মকর্তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ভীষণ শোকাহত ও মর্মাহত।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like