Home জাতীয় তামাক উৎপাদন ও তামাক জাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়: শিল্পমন্ত্রী

তামাক উৎপাদন ও তামাক জাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়: শিল্পমন্ত্রী

by shahin

ভয়েস রিপোর্ট: তামাক উৎপাদন ও তামাকজাত পণ্য নিষিদ্ধ বা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বুধবার (২০ মে) এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেছেন, এই শিল্পের উদ্যোক্তারা সরকারের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করেন। তারা সরকারের সব নিয়ম-কানুন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ জাতীয় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সরকারকে দেয়া রাজস্বের বিষয়টিও ভাবতে হবে। একইভাবে এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও জড়িত। তাদের কথাও ভাবতে হবে।
শিল্পমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তামাক পণ্য নিষিদ্ধের অনুরোধ করে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, সেই চিঠির জবাবে এ বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেবো। তিনি বলেন, তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা বোঝাতে হলে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধুমাত্র সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। এতে চোরাচালান বাড়বে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বুধবার (২০ মে) বিকেলে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে তামাক উৎপাদন এবং তামাক জাতীয় পণ্য সাময়িকভাবে নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার আব্দুল জলিল স্বাক্ষরিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তামাকজাত শিল্পের উৎপাদন বন্ধ করলে, তা হবে জাতীয়ভাবে মারাত্মক ক্ষতি।
শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, টোব্যাকো বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে দেশের হাজার হাজার প্রান্তিক চাষি এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি জড়িত। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও শিল্পোন্নত দেশগুলোসহ গোটা বিশ্বে এখন পর্যন্ত তামাক শিল্প চালু রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে এককভাবে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। জাতীয় রাজস্ব আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ এই শিল্পখাত থেকে আসে। সামগ্রিক বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ শিল্প চালু রাখা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় মনে করে।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়, এই শিল্প হুট করে বন্ধ করে দেয়া হলে, একদিকে যেমন দেশ বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে, অন্যদিকে তেমনই বিপুল পরিমাণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার তামাক পাতা না কিনলে প্রান্তিক চাষিরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আমাদের দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা দেবে। ফলে আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, ধূমপান কিংবা তামাক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও এর সেবনকারীরা তা জেনে-শুনেই সেবন করছেন। এ শিল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলেও তারা এটি সেবন করবেন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মোটিভেশন ছাড়া শুধুমাত্র সাময়িক উৎপাদন বন্ধ করে করোনাকালে ধূমপান প্রতিরোধ করা যাবে না। অধিকন্তু, এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে কালোবাজারিরা উৎসাহিত হবে এবং আমদানি করা সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের মাধ্যমে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় হারাবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’ ধূমপায়ী ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবীদের মাঝে এটি পরিহারের জন্য প্রচার জোরদার করতে পারে।

দেশে সিগারেট বিক্রি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ:
এরআগে, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল প্রকার তামাক কোম্পানির বিড়ি সিগারেট উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ মঙ্গলবার (১৯ মে) এই বিভাগের অধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে এক চিঠিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়।

শেখ ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’এর ক্ষমতাবলে এই আদেশ জারি করেন সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খাইরুল আলম ।

চিঠিতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের তামাক কোম্পানিগুলোকে সব ধরনের সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুল, তামাক পাতা, তামাক ডাঁটা সরবরাহ ও বিপণন করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিশেষ অনুমতিপত্র প্রত্যাহার করার কথাও জানানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে তামাককে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত । তাই ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কথা বলছে সংস্থাটি । ধূমপানের কারণে শ্বাসতন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ এবং কাশিজনিত রোগ তীব্র হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাধিক গবেষণা পর্যালোচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এছাড়াও গবেষণা দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ধূমপায়ীর মৃত্যুঝুঁকিও ১৪ গুণ বেশি।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি কমানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পড়ার প্রত্যয় এগিয়ে নিতে সব তামাক কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন ও তামাকপাতা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে এ ব্যাপারে চিঠিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতাও কামনা করা হয়।

You may also like