Home ধর্ম গ্রানাইট ও মূল্যবান পাথরে গড়া ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ

গ্রানাইট ও মূল্যবান পাথরে গড়া ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ

by Amir Shohel

ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার সুরা নামক স্থানে অবস্থিত। সুরম্য মসজিদ বা শুজা মসজিদ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে।

মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এই মসজিদে গ্রানাইটসহ নানা মূল্যবান পাথরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৫শ বছরেরও বেশি পুরোনো এই  মসজিদের নাম নিয়ে প্রচলিত আছে বিভন্ন ধরণের কথা। কেউ বলেন সৌর মসজিদ, কেউ সুরা মসজিদ, আবার কেউ বলেন শাহ সূজা মসজিদ।

মসজিদটি ইট ও পাথরে নির্মিত। এর চারপাশে ছড়িয়ে আছে কিছুসংখ্যক প্রস্তরফলক।  মসজিদটি একটি উঁচু চত্বরের ওপর নির্মিত। পূর্ব পাশ থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি চত্বর পর্যন্ত উঠে গেছে। উন্মুক্ত চত্বরটির চারপাশ পুরু প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।

মসজিদের আয়তন বাইরের দিকে ৪০ বাই ৬০ ফুট। মসজিদটি বাইরে চারকোণায় ৪টি এবং বারান্দায় দুইকোণে ২টি মোট ছয়টি অষ্টভূজাকৃতি গম্বুজ রয়েছে। এই গম্বুজগুলি মসৃণ কালো পাথরে দ্বারা আবৃত। মসজিদের সমগ্র বহির্দেয়ালে একটি পাথরের বর্ডার দিয়ে উপর নীচ দুই ভাগে বিভক্ত।

মসজিদটিতে একটি বর্গাকার এক গম্বুজ বিশিষ্ট নামাজ কক্ষ এবং পূর্ব দিকে ছোট তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বারান্দা রয়েছে। নামাজ কক্ষের উত্তর ও দক্ষিণে এবং বারান্দার উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে আরো চারটি প্রবেশ পথ রয়েছে। বর্গাকার নামাজ কক্ষটির আয়তন ভিতরের দিকে ১৬ বাই ১৬ ফুট। নামাজকক্ষের উপরে একটি বড় গম্বুজ এবং বারান্দায় তিনটি সমআকৃতির ছোট গম্বুজ ব্যবহৃত হয়েছে। এ নকশার মসজিদ উত্তর বাংলায় পঞ্চদশ শতকের শেষ দিকে এবং ষোড়শ শতকে খুবই জনপ্রিয় ছিল। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ বর্হিদেয়ালে ব্যবহৃত ইটের সূক্ষ্ম নকশার রয়েছে।

আরও পড়ুন- রুপসা-ভৈরবের মিলনস্থল খুলনার দর্শনীয় স্থান

মসজিদটির উত্তর পাশে ৩৫০ বাই ২০০ গজ আয়তনের একটি প্রাচীন দিঘি রয়েছে। দিঘির ১৫ ফুট উঁচু পাড়গুলো বেশ প্রশস্ত। দক্ষিণ পাড়ের মধ্যভাগে একটি প্রশস্ত ঘাট রয়েছে। কারো কারো মতে ঘাটটি প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত ছিল। দিঘির ঘাট থেকে প্রায় ১০০ ফুট দক্ষিণ-পশ্চিমে, দক্ষিণ পাড়ের পশ্চিমাংশের দক্ষিণ দিকে এবং সদর সড়কের উত্তর দিক বরাবর ৫ ফুট উঁচু একটি সমতল প্লাটফর্ম রয়েছে।

দালানটির বহির্গাত্রে গোলাপ ও অন্যান্য লতাপাতার নকশাখচিত পোড়ামাটির কারুকাজ আছে। জ্যামিতিক আকৃতির কিছু নকশাও দেখতে পাওয়া যায়। ভেতরের মিহরাবগুলো ছিল সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। মধ্যবর্তী মিহরাবটি সূক্ষ্মভাবে কারুকার্যখচিত। শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ, লতাপাতার নকশা, লেখ্য পটের মোটিফ এবং জ্যামিতিক আকৃতির নকশাগুলো করা হয়েছে বেশ চমৎকারভাবে। গম্বুজগুলোর ভিত পোড়া মাটির কারুকার্যখচিত ইট দ্বারা অলংকৃত।

 

ইমারতের অভ্যন্তরে ইটের গাঁথুনির উপরে পাথরের মোটা আবরণ ছাদ পার্যন্ত উঠে গেছে। এখানে পশ্চিম দেয়ালে মোট তিনটি মেহরাব রয়েছে। মেহরাব নির্মাণে পাথর ব্যবহৃত হয়েছে। সুলতানী স্থাপত্য রীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য বক্রাকার কার্নিশ ছাদে দেখা যায়। মসজিদটি নির্মাণে প্রধানত ইট ব্যবহৃত হলেও মসজিদের প্রায় এক চতুর্থাংশ স্থান জুড়ে পাথরের ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের প্রত্যেক প্রবেশ পথে ব্যবহৃত চৌকাঠ পাথরের তৈরি।

৫৫০ বছর আগে নির্মিত দিনাজপুরের টেরাকোটা অলংকরণ ও পোড়া মাটির চিত্রফলকের সুরা মসজিদ এখন অস্তিত্ব-সংকটে। সুরা মসজিদের মোতাওয়াল্লি সেকেন্দার আলী জানান, প্রাচীন এ সুরা মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন আসে। এ মসজিদে এখনো নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে। মসজিদটি সংস্কার এবং এর নির্মাণশৈলী সংস্কার করা হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে। মুসল্লিদেরও নামাজের উত্তম ব্যবস্থা হবে।

বর্তমানে স্থাপনাটির ভিত পর্যন্তই প্রাচীর রয়েছে। তবে পূর্ব পাশের প্রবেশদ্বারের উচ্চতা থেকে অনুমান করা যায়, মসজিদটি বাইরের শব্দ ও কোলাহল থেকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে বেষ্টন-প্রাচীরগুলোও যথেষ্ট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছিল। বাংলার আর কোনো মসজিদে এমন কৌশল আগে কখনো দেখা যায়নি।

ভয়েসটিভি/এএস/ডিএইচ

You may also like