Home ভিডিও সংবাদ হাওর, জঙ্গল, মহিষের শিং এই তিনে ময়মনসিংহ

হাওর, জঙ্গল, মহিষের শিং এই তিনে ময়মনসিংহ

by Amir Shohel

হাওর, জঙ্গল, মহিষের শিং এই তিনে ময়মনসিংহ। একসময় প্রবাদে এইভাবেই পরিচয় করানো হতো ভারতবর্ষের অন্যতম বড় জেলা ময়মনসিংহকে। এর প্রাচীন নাম নাসিরাবাদ। ২০১৫ সালে চার জেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহকে দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শিক্ষা নগরী হিসেবেও সুনাম রয়েছে ময়মনসিংহের। বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি টিচার্স মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ এখানে রয়েছে দেশের কৃষি উন্নয়নের সূতিকাগার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় ভাস্কর্য দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরাও আসেন। এসব ভাস্কর্যের অন্যতম হলো ‘বিজয় একাত্তর’ এবং ‘বিমূর্ত মুক্তিযুদ্ধ’। ভাস্কর্যে নজরকাড়া ভঙ্গিমা রয়েছেন ১ নারী, ১ কৃষক ও ১ ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা। ৭১এর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর স্মরণেই এটি নির্মিত। সেইসাথে ফুটে ওঠা বাঙালির সংগ্রাম, স্বাধীনতার প্রতীকী শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবার প্রেরণা জোগায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। আরো আছে আম বাগান, সবুজ মাঠ, লেক, ফিস মিউজিয়াম, কৃষি মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল মসজিদ, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, মাছ চাষের পুকুর, পশুর খামার, নান্দনিক সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় রেল স্টেশনও দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

এদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আলেকজান্ডার ক্যাসেল। ২৭ একরের বেশি জায়গা জুড়ে এই প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদটি তৈরি করা হয় আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার জন্য। ১৮৭৯ সালে বাগানবাড়ি শশীলজে প্রাসাদটি নিমার্ণ করেন তৎকালীন মুক্তাগাছার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য। কাঠ ও লোহার সমন্বয়ে প্রসাদটি তৈরি করেন চীনা কারিগররা। প্রাসাদে বেশি লোহার ব্যবহারের কারণে স্থানীয়দের কাছে এটি লোহার কুঠি হিসেবেও পরিচিত।

প্রাসাদের প্রধান ফটকের সামনে আছে মার্বেল পাথরের ২টি মূর্তি। দোতলা ভবনের ছাদে অভ্র ও চুমকি ব্যবহার করে প্রাসাদের ভেতরে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১৯২৬ সালে বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ ভ্রমনের সময় কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন। এছাড়াও এখানে আসেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীও। বর্তমানে এটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

আলেকজান্ডার ক্যাসেলের পেছনের গেট দিয়ে বের হলেই নজর কাড়বে ব্রক্ষপুত্র নদ, সার্কিট হাউস মাঠ আর জয়নুল আবেদিন পার্ক।

ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জয়নুল আবেদিনের কালজয়ী চিত্রকর্ম ও ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা। জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ এপ্রিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন জেলা প্রশাসনের সহায়তায় নিজের ৭০টি চিত্রকর্ম নিয়ে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মাধ্যমে এই সংগ্রহশালাটি স্থাপন করেন। পরে ১৯৮৭ সালে সংগ্রহশালাটি একটি দোতলা ভবনে রূপান্তরিত করে। বর্তমানে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা পরিচালনা করছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদকে ঘিরে বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান। উদ্যানটিতে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, বৈশাখী মঞ্চ, শিশুদের বিনোদনের জন্য দোলনা, ভাষা সৈনিক মোস্তফা এম.এ মতিন সিটি পাঠাগার।

জয়নুল আবেদীন ব্রহ্মপুত্রের শান্ত ও সুনিবিড় পরিবেশে বেড়ে উঠেছিলেন। নদীই ছিলো তার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। ১৯৩৮ সালে ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে আকা বেশ কিছু ছবি তাকে এনে দেয় নিখিল ভারত চিত্র প্রদর্শনীর সর্বোচ্চ পদক। গ্রাম বাংলার চিত্রই তার ছবিতে বেশি ফুটে উঠেছে। আর উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, বিদ্রোহী, কাক, সাধারণ নারী। ১৯৪০ সালের দুর্ভিক্ষের ছবি তাকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি।

রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ সদর। এ বিভাগের অপার সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যেকোনো দর্শনার্থীকেই।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like