Home বিশ্ব হারানো গৌরব উদ্ধার করতে চায় তুরস্ক

হারানো গৌরব উদ্ধার করতে চায় তুরস্ক

by Amir Shohel

একের পর এক শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ায় তুরস্কের ওপর ভীষণ চটেছে পশ্চিমা দেশগুলো। সবশেষ তারা ঘোষণা দেয়, ভূমধ্যসাগরে গ্যাস ড্রিলিং জরিপের জন্য জাহাজ পাঠাচ্ছে তারা। এমন ঘোষণায় এবার গ্রিসের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হলো তুরস্কের। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, এমন উস্কানিতে চুপ থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ভুল। আর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে রক্ষণশীল ব্লকের প্রধান ম্যানফ্রেড ওয়েবার হুশিয়ারি দেন, তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় এসেছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই গ্রিস-তুরস্কের সম্পর্ক ভালো নয়। এর কারণ, ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে আসা অবৈধ অভিবাসী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে চলছে ঠান্ডা লড়াই। সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়া জাদুঘরকে আবারো মসজিদে রূপান্তর করায় ভীষণ চটেছে গ্রিসসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
ভূমধ্যসাগরে জাহাজ পাঠানোর ঘোষণায় গ্রিসের দাবি, দেশটির সার্বভৌম অধিকারের লঙ্ঘন করছে তুরস্ক। এ নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস।

বর্তমানে ওরুচ রেইস নামের জরিপ জাহাজটি এখনো তুরস্কের আনাতোলিয়া বন্দরেই আছে। আর যে এলাকায় জরিপ চালানোর ঘোষণা দিয়েছে সেটি সাইপ্রাস ও ক্রিট দ্বীপের মাঝে। উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকা টহল দিতে প্রস্তুত হচ্ছে দুই দেশেরই নৌবাহিনী।

এমন খবরে মুখ খুলেছেন ইউরোপীয় নেতারাও। তাদেরও দাবি, তুরস্ক ও রাশিয়া পূর্ব ভূমধ্যসাগরে দিনদিন তৎপরতা বাড়িয়ে চলেছে। এতে উদ্বিগ্ন তারা। এরমধ্যে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস উসকানিমূলক পদক্ষেপ নেয়া থেকে তুরস্ককে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আর ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ লেছেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেরিটাইম অঞ্চলে কেউ হুমকি সৃষ্টি করলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্ক ও গ্রিস দুটি দেশই ন্যাটোর সদস্য হলেও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে জ্বালানি আহরণের প্রতিযোগিতায় তারা প্রতিপক্ষ। কারণ কয়েক বছর আগে সাইপ্রাস দ্বীপের উপকূলে বিশাল গ্যাসের মজুত আবিষ্কৃত হলেও দুদেশের মধ্যে শুরু হয় আরেক প্রতিযোগিতা।
১৯৭৪ সাল থেকেই এই এলাকার দখল নিয়ে চলছে কয়েকটি দেশের বিতর্ক। কিন্তু গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের পর গ্যাস তুলতে চুক্তি করে গ্রিস, ইসরায়েল ও মিসর। অন্যদিকে সাইপ্রাসের পশ্চিম দিকে গ্যাসকূপ খনন জোরদার করে তুরস্ক।

এদিকে, উত্তর সাইপ্রাসকে একমাত্র আঙ্কারাই প্রজাতন্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তাদের যুক্তি, সাইপ্রাসের প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগাভাগি করতে হবে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ নিয়ে লিবিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিও করে তুরস্ক।

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে বলেছেন, কোনোভাবেই তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাসকে এ অঞ্চলের জ্বালানি সমীকরণের বাইরে রাখা যাবে না। এটা সবাইকেই মানতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতার কারণে ভুমধ্যসাগরের জলসীমা নিয়ে বিভিন্ন দেশের বির্তক আজো চলছে।

কারণ পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরে গ্রিসের অনেক দ্বীপ আছে যা তুরস্কের কাছে। এমনকি উপকূল থেকেও দেখা যায়। ফলে কার সমুদ্রসীমা কোথায়, তা নির্ধারণ করা জটিল। আর গ্রিস যদি সমুদ্রসীমা ছয় মাইল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১২ মাইল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে তাহলে তুরস্কের সমুদ্রপথ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট গত জুনে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, তুরস্কের মানুষকে তাদের মূল ভূখণ্ডে আটকে রাখতে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে; তা ছিঁড়ে ফেলা হবে। পাশপাশি তাদের দাবি, তুরস্ক জাতিসংঘের সমুদ্র সংক্রান্ত আইন মেনেই কাজ করছে। এখন অপেক্ষার পালা ভুমধ্য সাগরের এই গ্যাসক্ষেত্র দখলের লড়াইয়ে জয়ী হয় কারা।

লেখক: ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক

You may also like