সামান্য এক নুড়ি পাথর পলিশের মাধ্যমে কেমন করে বিশ্বের সবচেয়ে দামি বস্তুতে পরিণত হয়ে উঠল। শুধু একাধিপত্য ও প্রচারণার মাধ্যমে আজ অতি সামান্য থেকে অসামান্য মূল্যের হয়ে উঠেছে হীরা।
গোটা বিশ্বে হীরা একটি মূল্যবান বস্তু। বিয়ে কিংবা উৎসবে হীরার আংটি সবচেয়ে জনপ্রিয় উপহার। যুগে যুগে এই বহুমূল্যের পাথরটি সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে।
কিন্তু হীরা কেন এত দামী?
দুই শতাব্দী আগেও হীরা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাত না মানুষ।তখন হীরা নামের বস্তুটি আসলেই দুর্লভ ছিল।১৮৭০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিপুল পরিমাণ হীরার সন্ধান মিলে।
হীরা যে তখন অসাধারণ বস্তু হয়ে ওঠেছিল এমনটিও নয়। বরং তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে। কিন্তু এ অবস্থা খুব বেশি দিন স্থায়ী ছিল না।
‘ডি বিয়ারস’ নামের এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ছিল সেসিল রোডাস। কয়েক দশকের পরিচর্যায় রোডস তাঁর প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমে একটি বাণিজ্য-জোটে পরিণত করেন।
পরবর্তী তা বাজারে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমেই হীরার উৎপাদন স্থিতিশীল হয়।
তারপরই হঠাৎ করে হীরার আংটি ও অলংকারের প্রতি মার্কিন নাগরিকদের আগ্রহ কমতে থাকে।তখন এমন এক অবস্থায় পড়ে গেল, যখন প্রয়োজনের অধিক জোগান থাকা সত্ত্বেও চাহিদা ছিল কম। কাজেই নতুন ধরনের এক পদ্ধতির অবতারণা করতে হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এন ডব্লিউ আয়ার বরাবর এক চিঠি পাঠাল। জানতে চাইল ‘ভিন্ন ধরনের প্রচারণা’ করে হীরার বিক্রি বাড়ানো সম্ভব কি না।
এরপর আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বিজ্ঞাপনী প্রচারাভিযান। তারকাদের এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে হীরা ধার হিসেবে দেয়া শুরু করে ডি বিয়ারস।
সংবাদমাধ্যম দখলে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের কলামে বড় বড় করে তাদের পণ্যের কথা ছাপতে থাকে। ১৯৪৮ সালে লিপিকার ফ্রান্সেস গেরেটি মাত্র চার লাইনে হীরাকে ব্যাখ্যা করে লেখেন, “অনন্তকালের জন্য হীরা”।
এই চার লাইন যেমন ছিল স্বর্গীয় ভালোবাসার রূপক, তেমনি ছিল এক নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ। তাতেই মানুষের মন কেড়ে নেয়। হু হু করে বাড়তে লাগল হীরা জনপ্রিয়তা।
১৯৬৮ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ আমেরিকান কনে হীরার আংটি পরতে শুরু করেন। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি ডি বিয়ারস। তাই প্রচারাভিযান চলমান ছিল।
১৯৮০ সালে নতুন এক বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করল। যাতে বলা হয়, “মাত্র দুই মাসের বেতন কি অবিনশ্বর কিছুর জন্য অতি সামান্য দাম নয়?
হীরার আংটির মতোই নতুন এই বিজ্ঞাপন হবু বরদেরও হীরার পেছনে অর্থ বিনিয়োগে উৎসাহিত করে।পরবর্তীতে ১৯৮২ সাল থেকেই হীরার দাম বাড়তে থাকে।
ভয়েস টিভি/আইএ