Home জাতীয় গ্রেনেড হামলার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন যারা

গ্রেনেড হামলার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন যারা

by Newsroom
গ্রেনেডের দুঃসহ স্মৃতি

ঢাকা : ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহতরা ভালো নেই। অনেকেই এখনো গ্রেনেডের গ্রেনেডের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে কেউ হারিয়েছেন চোখ, কারো গেছে চলার ক্ষমতা। কেউ হারিয়েছেন শ্রবণশক্তি। অনেকে প্যারালাইসড হয়ে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। অনেকের জীবনে এখন ক্র্যাচই চলাফেরার নিত্যসঙ্গী।

এভাবেই ১৬ বছর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে তৈরি হয় এক বিভীষিকা।

সেই হামলায় আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন। বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রাণার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভিন। ঢাকা জেলার সেচ্ছাসেবক নেত্রী হিসেবে সাভার থেকে সেই সমাবেশে যোগ দেন তিনি। গ্রেনেডের ভয়াবহ শব্দে অচেতন হয়ে পড়েন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার জ্ঞান ফেরে। শরীরে এখনো গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে ভয়াল হামলার বেদনা ও আতঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছেন

২০১৬ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর ২ ছেলেকে নিয়েই কাটছে তার জীবন। নিজের বাড়িতে ভাই-বোনদের দেখভালে আর প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রাপ্ত অনুদানে চলছে তার চিকিৎসা ও সংসার।

ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে ঘাতকের বুলেটে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স করপোরাল মাহবুবুর রশীদ। এই ঘটনার ১৬ বছরেও কান্না থামেনি বীর শহীদ মাহবুবুর রশীদের বৃদ্ধা মায়ের।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের সন্তান মাহবুবুর রশীদ। ২০০২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল থাকাবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এর কিছুদিন পর তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে যোগ দেন।

সেদিন শেখ হাসিনা অক্ষত আছেন বুঝতে পেরে ঘাতকরা গুলিবর্ষন শুরু করে। পরপর ছয়টি গুলি ছুঁড়া হলেও একটি গুলিও শেখ হাসিনাকে ছুঁতে পারেনি। শেখ হাসিনাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষী মাহবুবুর রশীদের পিট ঘাতকদের ছোঁড়া গ্রেনেড ও গুলিতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেলেও একবারের জন্যও পিছনে ফিরে তাকাননি। শেখ হাসিনাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে গাড়ির দরজা বন্ধ করার পরপরই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মাহবুবুর রশীদ। এর কিছুক্ষণ পর তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মারা যান মাহবুবুর রশীদ।

মাহবুবুর রশীদ নিজের সাহস, সততা-নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার কারণে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তার ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কর্তব্যবোধের চেয়ে বড় আর কিছুই ছিলো না তার কাছে। এমনই জানালেন, শহীদ মাহবুবুর

মাহবুবুর রশীদের বৃদ্ধ বাবা জানান, তাদের পরিবারের তিন সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছেন।

মাহবুবুর রশীদের অবদানের জন্য গর্বিত পুরো এলাকাবাসী। আগষ্ট এলেই গ্রামবাসীর মনে পড়ে এই বীর সন্তানের আত্মত্যাগের কথা।

গেল ১৬ বছর ধরে চোখের পানি মুছছেন গ্রেনেড হামলায় নিহত রংপুরের রেজিয়া বেগমের দুই ছেলে এবং স্বজনরা। কাউনিয়া উপজেলার গঙ্গানারায়ন গ্রামের আফাজ উদ্দিনের মেয়ে রেজিয়া বেগম। স্থানীয় মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী আয়শা মোকারমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে।

ঘটনার দিন প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকের কাছেই অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সেখানেই ঘাতকদের ছোড়া গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। ছোট ছেলে নুরন্নবী মায়ের মরদেহ শনাক্ত করে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করে। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেয়া হয় আর্থিক সহযোগিতা।

রেজিয়া বেগমের ছেলে জানান, শেখ হাসিনার সহায়তায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে বসবাস করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঘাতকদের দ্রুত কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।

ওই হামলায় নিহত হন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর পাচানী গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী আতিক সরকার এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও হাইমচর উপজেলার উত্তর চর কৃষ্ণপুর গ্রামের আঃ কুদ্দুছ পাটওয়ারী।

দীর্ঘ ১৬ বছর পর হামলাকারীদের রায় কার্যকর না হওয়ায় এখনো শোকাহত এই দুই পরিবার। তারা সরকারের কাছে মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন।

যেখানেই আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল-সেখানেই ছুটে যেতেন লিটন মুন্সী। তিনি ছিলেন, আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ। আর তার টানেই লিটন সে দিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন। বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের হোসেনপুর গ্রামের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী নির্মমভাবে নিহত হন। এখনও শোকের রেশ কাটেনি তার পরিবারের।

গ্রেনেড হামলায় আহত মাদারীপুরের অন্তত ৫ জন এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রেনেডের স্প্লিন্টার। দীর্ঘদিন স্প্লিন্টারগুলো শরীরের বিভিন্ন স্থানে থাকায় চিকিৎসার অভাবে শরীরের এক অংশ অকেজো হয়ে পড়েছে।

সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান জানান, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে হায়ানারা এই হত্যাকাণ্ডে মেতে ওঠে।

২১শে আগস্টের শোককে শক্তিতে পরিণত করে সামনের দিনগুলোতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গঠনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার অঙ্গিকারও করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান।

ভয়েস টিভি/নিজস্ব প্রতিবেদক/ডিএইচ

You may also like