Home অপরাধ ধর্ষণের শাস্তি কোন দেশে কেমন?

ধর্ষণের শাস্তি কোন দেশে কেমন?

by Amir Shohel
গৃহবধূ

ধর্ষণ শব্দটি শোনামাত্রই বাংলাদেশের চোখে মুখে ভেসে ওঠে একাত্তরের বর্বর পাকিস্তানি শোষকদের মুখ। ত্রিশ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির সেই দুঃসময় পেরিয়ে আজ স্বাধীন বাংলাদেশ।

কিন্তু আজও সংগঠিত হচ্ছে ধর্ষণের মত ঘৃণ্য অপরাধ। নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে নানা উদ্যোগ। তবে সম্প্রতি নোয়াখালির এখলাসপুরের ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে সবার হৃদয়ে। আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বিবস্ত্র সেই নারীর আহাজারি চিৎকার ছড়িয়ে পড়েছে ৬৪ হাজার বর্গমাইল জুড়ে। সম্মিলিত কণ্ঠে দাবি উঠেছে ধর্ষকের ফাঁসি।

ধর্ষণের মত এই ঘৃণ্য অপরাধ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বিভিন্ন শাস্তির বিধান। চীনে ধর্ষকের জন্য বরাদ্দ মৃত্যুদণ্ড। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরুসাঙ্গ কর্তনের দৃষ্টান্তও রয়েছে।

ফ্রান্সে ধর্ষককে দেয়া হয় ১৫ বছরের কারাদণ্ড। ঘটনার নৃশংসতা বিচারে কোনো কোনও ক্ষেত্রে সেটা ৩০ বছর পর্যন্ত সাজা দেয়া হয়।

যদি কারো বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপরাধ প্রমাণিত হয়। সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সৌদি আরবে ধর্ষণে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে শাস্তি প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ। তবে তার আগে দোষীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়। ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে গুলি করে অপরাধীর বুক ঝাঁঝরা করে দেয়া হয় উত্তর কোরিয়ায়।

আফগানিস্তানে আদালত রায় দেয়ার চারদিনের মধ্যে অভিযুক্তকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মিশরে এখনও অনেক অপরাধে মধ্যযুগীয় শাস্তির প্রথা থাকলেও ধর্ষণের শাস্তি ফাঁসি।

ইরানেও ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ফাঁসি অথবা প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যু কার্যকর করা হয়। ইসরায়েলে ধর্ষণের সংজ্ঞা একটু ভিন্ন। অন্য যৌন নির্যাতনও এর অন্তর্ভুক্ত। অপরাধ প্রমাণ হলে ১৬ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে দেশটিতে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ও ফেডারেল আইন অনুযায়ী ধর্ষণের বিচার ভিন্ন। ফেডারেল আইন অনুযায়ী দোষীর সাজা কয়েক বছরের কারাদণ্ড থেকে যাবজ্জীবনও হতে পারে। ধর্ষকের তিন থেকে ছয় বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে রাশিয়ায়। তবে পরিস্থিতির বিচারে ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যদি ধর্ষকের আচরণ নৃশংস হয়ে থাকে, তবে ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে।

নৃশংসতা অনুযায়ী দোষীর তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয় নরওয়েতে। মঙ্গোলিয়ায় ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ৯ ধারা মতে যদি কোন পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে, তাহলে তিনি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তা হলে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ফলে সেই নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা তিনি আহত হন, তা হলে ওই দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নারী বা শিশুকে- ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন; আর যদি ধর্ষণের চেষ্টা করেন, তা হলে সেই ব্যক্তি অনধিক দশ বছর বা অন্যুতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে কোনো নারী ধর্ষিতা হন, তা হলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন সেইরূপ ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা ধর্ষিতা নারীর হেফাজতের জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন, তিনি বা তারা প্রত্যেকে, ভিন্নরূপ প্রমাণিত না হলে, হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য, অনধিক দশ বছর বা অন্যুতম পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।

তবে এখলাসপুরের ঘটনায় যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সেখান থেকে ধর্ষকের সর্বনিম্ন শাস্তি হিসেবেই মৃত্যুদণ্ডের দাবি এসেছে। আর যে কোনো ধর্ষণ মামলাই দ্রুত বিচার আইনে হতে হবে বলে তাদের চাওয়া।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like