Home জাতীয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যতো অর্জন

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যতো অর্জন

by Newsroom
বঙ্গবন্ধু কন্যা

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও উন্নত সমৃদ্ধ দেশের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন চার বার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এনে দিয়েছে। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপের বস্তবায়ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেখে চলা অবদান সারা বিশ্বেই প্রশংসিত।

সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভ্যাকসিন হিরো’, ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’, ‘স্টেট ম্যান’, ‘ইস্টার অব ইস্ট’, ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সহ অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনেও সফল। এছাড়া মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তাকে বিভিন্ন সময় সম্মানিত করেছে।

এ পর্যন্ত শেখ হাসিনা অর্জিত আন্তর্জাতিক পদক ও পুরস্কারের সংখ্যা ৩৯টি।

১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় এসে পার্বত্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। দীর্ঘ দুই দশকের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্যে ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার দেয়।

১৯৯৯ সালে অ্যাওয়ার্ড হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ফেদেরিকো মেয়র বলেছিলেন, ‘জাতি গঠনে আপনার পিতার অনুসৃত পথ অবলম্বন করে আপনি দেশকে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথে নিয়ে গেছেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনার উদ্যোগ ও নিষ্ঠা বিশ্বে শান্তির সংস্কৃতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

ক্ষমতার ওই মেয়াদেই জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ মেডেল প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ পি জে আবদুল কালামের নামে প্রতিষ্ঠিত ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এডভাইজরি কাউন্সিল-এর ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৯ পান। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও পারস্পরিক সন্তোষজনক সম্পর্ক, নিজ দেশের জনগণের কল্যাণ, নারী ও শিশু এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতায় অবদানের জন্য এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

ওই বছরই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দেয় ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন।

বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনা গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘গ্লোবাল সামিট অব ওমেন’ তাঁকে এ সম্মাননা দেয়।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হন শেখ হাসিনা। তাদের প্রতি মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় তিনি ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বা ‘মানবতার মা’ উপাধিতে ভূষিত হন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে দায়িত্বশীল নীতি ও তার মানবিকতার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১৮ স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ পদক পান।

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সি ‘দি ইন্টার প্রেস সার্ভিস এবং নিউইয়র্ক, জুরিখ ও হংকং ভিত্তিক তিনটি অলাভজনক ফাউন্ডেশনের নেটওয়ার্ক গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন ২০১৮ সালে শেখ হাসিনাকে এ দুটি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে।

২০১৫ সালে শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দূরদর্শী পদক্ষেপে নেওয়ায় তাকে সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বছরই জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য শেখ হাসিনাকে ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনে বিশেষ করে শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে অবদানের জন্য জাতিসংঘের অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

উইমেন ইন পার্লামেন্ট ও ইউনেস্কো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘ডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ২০১৯ সালে তাকে এ পদক দেওয়া হয়।

নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাকে ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দু’বার সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়। স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্যে ২০১১ ও ২০১৩ সালে তাঁহকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।

নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ প্রদান করে।

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন।

বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট ও সম্মাননা পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে।

এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের অ্যালবার্টা ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিবারেল আর্টস এ ভূষিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ প্রদান করে।

১৯৯৯ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে দেসিকোত্তামা ডিগ্রি এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় অবদানের জন্য রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয়ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। তাকে ওই সম্মাননা দেয়া হয়।

১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি, ২০০০ সালে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস সম্মাননা প্রদান করে।

এছাড়া ১৯৯৯ পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা পদক, এমকে গান্ধী পদক, ২০০৯ সালে ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণ পদক, হেড অব স্টেট পদক, ২০১১ ও ২০১২ গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৭ নেতাজী স্মৃতি পুরস্কার পান।

খাদ্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও আইসিটি উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল ইউনিভার্সিটি তাকে সনদ প্রদান করে।

সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় শক্তিধর দেশগুলো নাকানিচুবানি খেলেও শক্ত হাতে শেখ হাসিনা অদৃশ্য ভাইরাস সামাল দিচ্ছেন। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো আক্রান্ত ও মৃতের হার কম। করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের জন্যই করোনাকালে দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ ধরে সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পাস করা হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতিতে নিজ দেশের মর্যাদা সমুন্নত রেখে কী প্রতিবেশি, কী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেই বাংলাদেশ উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

করোনাকালে ৭ কোটি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। ২ কোটি পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন ডিজিটাল ব্যাংকিং চ্যানেলে। করোনা দুর্যোগে সবকিছু বন্ধের মধ্যেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। গত জুন মাসে ১৮৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কারণ শেখ হাসিনা রেমিটেন্সে প্রণোদনা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার দূরদর্শী সাহসী সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সকলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন বাস্তব। মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। দেশে এখন সবকিছুই ডিজিটাল।

ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে অনলাইনে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসার ক্লাস নেয়া হচ্ছে। সর্বত্রই পণ্য কেনাবেচা হয় অনলাইনে। করোনায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচার প্রস্তুতি চলছে। শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।

চাহিদার চেয়েও দেশে এখন বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের কুঁড়েঘরেও এখন বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি। গ্রামাঞ্চলেও এখন ইন্টারনেট-ডিশ লাইন।

ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মোবাইল ব্যাংকিং, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ, সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।

তার ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি ও নাগরিকদের ‘আইডি কার্ড’ দেয়ার কর্মসূচি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা শিল্পায়নের পাশাপাশি কৃষিতে সাফল্য দেখিয়েছেন। কৃষিতে আধুনিকায়ন এবং নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করায় ধান উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে উঠতে যাচ্ছে।

ইসলাম বিদ্বেষী পশ্চিমারা সব সময় মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত। ফলে ৯২ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদ’ তকমা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। নানা ধরনের উস্কানি ছিল। জঙ্গিরা হলি আর্টিজান হত্যাকান্ডসহ বেশ কয়েকটি পৈচাশিক ঘটনাও ঘটিয়েছে।

কিন্তু শেখ হাসিনার শক্ত নেতৃত্বে পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্বের পক্ষেই এমন সাফল্য সম্ভব।

করোনার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলা করেছেন শক্তভাবেই। অথচ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এখনো আম্পানের ছোবলে কোমর সোজা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা হয়ে গেছেন মানুষের ভরসাস্থল। শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে ১৮ কোটি মানুষের দেশ এখন শান্তিপূর্ণ মুসলিম রাষ্ট্র।

এই সাফল্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সম্মানিত করেছে। তিনি জাতিসংঘের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার’, ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার, আবহাওয়া পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পেয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিদের মধ্যকার দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির পর আস্তে আস্তে বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ কমতে থাকে। বিভিন্ন জটিলতায় পার্বত্য চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলেও এখন পাহাড়ে আগের মতো যুদ্ধের ডামাডোল নেই।

শহীদ দিবস ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি এনে দেওয়ার উদ্যোগ আসে কানাডা প্রবাসী দুই বাংলাদেশির হাত দিয়ে। তবে এর পরিপূর্ণতা বঙ্গবন্ধু কন্যার হাতেই।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরের বছর থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারিকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো।

পরে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। বাংলাদেশ প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করেছিল।

শেখ হাসিনার সরকার বিগত মেয়াদে ২০০৯ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য হেগের সালিশি আদালতে নোটিশ করে। এর পথ ধরেই ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমার রায় পায়। দুই রায়ে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি সই হলেও সেটা কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলতি মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রচেষ্টায় চুক্তিটি কার্যকর হয়। এর ফলে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়। ছিটমহলবাসীরা ৬৮ বছর পরে নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় পান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করলেও ওই মেয়াদে তা শেষ করতে পারেননি। পরে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিচার কাজ শেষ হলে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয়। বাকি খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের যুগান্তকারী কাজ হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সরকারের চলতি ও বিগত মেয়াদে চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তাদের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাকি চিহ্নিতদের বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এসব অর্জনের পাশাপাশি শেখ হাসিনা তার নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর একশ নারীর তালিকায় ৩৬তম স্থান পান শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে তিনি ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন।

প্রায় চার দশকের মতো সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মতো আলো ছড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। মানবতার জননী, নির্লোভ, আপোষহীন, তেজী, দুরদৃষ্টি সম্পন্ন এই নেত্রী সংগ্রাম করেই আজ বিচক্ষণ এক রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। তার দিকেই তাকিয়ে থাকে সারা জাতি। তিনি জাতির শেষ ভরসার স্থল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ন্যায় তিনিও হতে চলেছেন তৃতীয় বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, মেহনতি মজলুম জনগণের বন্ধু মানবতার জননী।

ভয়েস টিভি/একে/টিআর

You may also like