Home জাতীয় আইভি রহমানেরর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আইভি রহমানেরর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

by Shohag Ferdaus

আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী বেগম আইভি রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তিনি গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ২৪ আগস্ট মারা যান।

আইভি রহমানের ছেলে বিসিবি সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ- ৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন। ঘটনার দিন বিকেলে আইভি রহমান তাঁর স্বামী জিল্লুর রহমানের সঙ্গে জনসভায় গিয়েছিলেন। এদিন জিল্লুর রহমান শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাকে ছিলেন। আইভি রহমান মহিলা নেতাকর্মীদের নিয়ে মাটিতে বসেছিলেন। গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান এদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও আইভি রহমান গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে মারা যান।

নাজমুল হাসান পাপন মায়ের মৃত্যুর বিষয়ে বলেন, ‘ঘটনার দিন খবর পেয়ে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে ডাক্তার-নার্স কাউকে দেখতে পাইনি। এ সময় মাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তারপর অনেকটা জোর করে মাকে সিএমএইচে নিয়ে গেলাম। সেখানেও চিকিৎসা দিতে বিলম্ব করল। তৎকালীন বিএনপি সরকার আমার বাবা জিল্লুর রহমানকে দুদিন দেখতে দেয়নি মাকে। কতটা নির্মম নিষ্ঠুর আচরণ করেছে তৎকালীন সরকার। মারা যাওয়ার পর লাশ আমার বাবার বাড়ি ভৈরব নিয়ে জানাজা দিতে চাইলাম, এতেও বাধা দেয় সরকার। পরে অনেক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বনানী কবরস্থানে মাকে দাফন করলাম।’

নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘অনেকদিন হয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হত্যা মামলার বিচারের রায় হয়েছে। কিন্তু এখনো রায় বাস্তবায়ন হয়নি। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আমি বিচারের রায় বাস্তবায়ন দেখতে চাই। অপরাধীদের শাস্তি হলেই আমার মা কবরে শান্তি পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

আইভি রহমানের মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে ২৪ আগস্ট সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশগ্রহণ করবেন।

আইভি রহমান ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই ভৈরব শহরের চণ্ডীবের এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম জেবুন্নেছা আইভি। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভৈরবের কৃতী সন্তান (প্রয়াত রাষ্ট্রপতি) জিল্লুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়। এরপর থেকে নামের সঙ্গে ‘রহমান’ যুক্ত হয়। তাঁর বাবা জালাল উদ্দিন ছিলেন তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। আট বোন চার ভাইয়ের মধ্যে আইভি রহমান ছিলেন পঞ্চম।

আইভি রহমান ১৯৬০ সালে বাংলাবাজার স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক এবং ১৯৭২-৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পরীক্ষার্থী ছিলেন।

আইভি রহমান তাঁর জীবনব্যাপী রাজনীতি ও সমাজসেবার মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের বিশেষ করে পিছিয়েপড়া নারী সমাজের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন পুরোভাগে। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামকে মহিমান্বিত করে গেছেন। এর বিনিময়ে তিনি কিছু চাননি, সেই আশাও কোনোদিন পোষণ করেননি।

বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আইভি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিল আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার আহ্বানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পর সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর ইন্দিরা রোডস্থ বাসভবনে রাইফেল চালনা ও ফাস্ট এইড বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম বদরুন্নেছা ও সৈয়দা সাজেদা চেীধুরীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য স্থাপিত ক্যাম্পগুলোতে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করতেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ ও মনোবল বৃদ্ধির জন্য স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে প্রায়ই কথিকা পড়তেন আইভি রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হৃদয়বিদারক ঘটনার পর থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

আইভি রহমান নারী জাগরণে রেখে গেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা। তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৬ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত সহসভানেত্রী এবং ২০০৪ সালে সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আগস্ট ১৯৯৬ থেকে সেপ্টেম্বর ২০০১ পর্যন্ত জাতীয় মহিলা সংস্থার সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like