Home জাতীয় দেশজুড়ে তিতাসের ১৩ হাজার কিমি মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপ লাইন

দেশজুড়ে তিতাসের ১৩ হাজার কিমি মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপ লাইন

by Newsroom

ঢাকা ও ময়মনসিংহে মোট ১৩ হাজার ১৩৮ কিলোমিটার মেয়াদোত্তীর্ণ পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস।

এসব পাইপলাইনের মেয়াদ শেষ হয়ে আরো অনেক আগেই গেছে। তাই এসব পাইপলাইনে সৃষ্টি হয়েছে হাজারও লিকেজ। আর এসব ছোট ছিদ্র দিয়ে গ্যাস বের হওয়ায় তৈরি হচ্ছে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

তিতাস গ্যাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিনটি কারণে গ্যাসের পাইপলাইনে লিকেজ হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, অতি পুরনো পাইপলাইন, পাইপলাইনে সঠিকভাবে জং প্রতিরোধী আবরণ না দেয়া এবং মানহীন পাইপ ব্যবহার।।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিষ্ফোরণে ২৭ জন নিহত ও ৪০ জন আহতের ঘটনাও এই গ্যাস লাইনের লিকেজের কারণেই ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তা কেবল পেট্রোবাংলা আর তিতাসের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

গ্যাসের পাইপলাইন লিকেজের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোটো-বড় দুর্ঘটনা। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে নামাজের সময় বিষ্ফোরণের ঘটনাও এই গ্যাস লিকেজের কারণেই ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন মুসল্লিরা।

৪ সেপ্টেম্বর রাতে এশার নামাজের পর বিষ্ফোরনে শিশুসহ ২৭ জন নিহত ও কমপক্ষে ৪০ জন মুসল্লী আহত হয়। এ ঘটনার পর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাইপ সংস্কারে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবির বিষয়টি উঠে আসে। এরপর কর্তব্যে অবহেলা ও যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে তিতাস গ্যাস কোম্পানির ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ১৯৬৮ সাল থেকে গ্যাস বিতরণ করে আসছে। তবে ৮০ এবং ৯০-এর দশকে এসে পাইপলাইন ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়। তবে ২০০০ সালের পর লাইন সম্প্রসারণ অনেকটা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর ২০১০ সালের পর থেকে তিতাসে নতুন পাইপলাইন খুব একটা বসানো হয়নি।

১৯৬৭-৬৮ সালে ডেমরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি এবং ডেমরা থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ১৪ ইঞ্চি ও ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন মাটির নীচ দিয়ে বসানো হয়। এরপর সেখান থেকে দুই ইঞ্চি থেকে ছয় ইঞ্চি ব্যাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে গ্রাহকদের গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়। ৯০ দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে ৫০ পিএসআই চাপের বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ লাইন ছিলো।

অর্থাৎ বিতরণ কোম্পানিটির প্রায় সব পাইপলাইনের মেয়াদই শেষ হয়ে এসেছে। ফলে পুরনো পাইপলাইন সরিয়ে এখন নতুন পাইপলাইন বসানো জরুরি। তবে সরকার আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখায় এই খাতে নতুন করে অর্থায়নে খুব একটা আগ্রহ নেই কোম্পানিটির। একই কারণে নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন প্রকল্পেরও গতি নেই।

তিতাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, পাইপগুলো মাটির নিচে দেওয়ার সময় এক ধরনের জং নিরোধক কালো প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হয়। আনাড়ি অথবা অনেক সময় ইচ্ছা করে কেউ যদি সেটি দিয়ে না মুড়িয়ে মাটির নিচে স্থাপন করে তাহলে পাইপে জং ধরে লিকেজ হতে পারে।

এছাড়া পাইপের মানের ওপরেও অনেক সময় লিকেজ হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। তিতাস মূলত চীন থেকে পাইপ কিনে আনে। চীনের পাইপ অন্য দেশের তুলনায় সস্তা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর অন্য দেশ বিশেষ করে কোরিয়া থেকে আমদানির চিন্তা করা হলেও পরে দাম বেশি বলে আর বিষয়টি এগোয়নি।

তিতাস কোম্পানির সূত্র বলছে, পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে তিতাস এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা দিয়ে অতি পুরনো পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। যদিও এই প্রকল্পের প্রস্তাবনাটি এখনও জ্বালানি মন্ত্রণালয় পর্যন্তই পৌঁছায়নি। গত বছরের শুরু থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

তিতাসের মোট পাইপলাইন রয়েছে ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার। গ্রাহক সংখ্যা আছে ২০ লাখেরও বেশি। মোট পাইপলাইনের মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার। এছাড়া ঢাকার আশেপাশে অর্থাৎ নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর এবং কিশোরগঞ্জেও তিতাসের পাইপলাইন আছে।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like